মিষ্টি শীতের সকালে হটাৎ মনে হল সবাই মিলে একটু ডে ট্রিপে গেলে মন্দ হয় না। মাশরিফও অনেক দিন ঘরে বন্দি হয়ে আছে , বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সকাল সকাল মাশরিফের দুই ফুফুকে বলতেই এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলো। সমস্যা একটাই বাসায় আম্মাকে মানে মাশরিফের দাদুমনিকে রেখে যেতে হবে, অনেক করে বললাম যেতে আম্মা রাজি হলো না।এটাই মোটামুটি জিন্দা পার্কে মাশরিফের বেড়ানোর শুরুর গল্প।
যাই হোক, টপাটপ রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উত্তরা থেকে ৩০০ ফিট ধরে পূর্বাচল পার হয়ে কাঞ্ছন ব্রিজের বামে জিন্দা পার্ক। সময় লাগে ১.২০-১.৩০ মিনিট। ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি নিয়ে ঢাকার আসে পাশে গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য দারুন জায়গা । কোনো কোলাহল নেই, উটকো ঝামেলা নেই। সবুজে ঘেরা এই পার্ক। পুরো পার্ক জুড়ে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছগাছালি। পাখির ডাকে মুখর থাকে সব সময়। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়। আর কি নেই এই খানে স্কুল, লাইব্রেরি, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, খেলার মাঠ, লেক, প্যাডেল বোটিং, ড্রাম ব্রিজ, ছোট সাঁকো। সারাদিন কাটানোর জন্য বিশেষ করে বাচ্চাদেরকে সময় দেয়ার জন্য দারুন জায়গা। সব চেয়ে ভালো লেগেছে অবকাঠামো নির্মাণে সব জায়গায় রয়েছে রুচিশীলতা ও পরিকল্পনার ছোঁয়া। আদর্শ গ্রাম যাকে বলে -সব দিক থেকেই পরিপূর্ণ।
জিন্দা পার্কে ঢুকেই চমৎকার স্কুল আর খেলার মাঠ। মাশরিফ তখন এক বৎসরে পরে নাই। মাশরিফ ওর স্ট্রলারে করে পুরো পার্ক ঘুরে বেড়ানো শুরু করে। ওর স্ট্রলারের অপারেটর হলো ওর দুই ফুফাতো বোন অরবি এবং জুনাইনা। শীতের মিষ্টি সকালে মৃদু মন্দ হাওয়ায় লেকের পারে সবুজ মাঠে অথবা ছোট ছোট টিলার উপরে ওদের খেলা দেখতে দেখতে দুপুরের খাবার সময় হলে গেলো ।
জিন্দা পার্কে ভিতরে ব্যবস্থা আছে কিন্তু শুক্রবারে এই সময় অনেক মানুষ এই খানে চলে আসে। বিশেষ করে নামাজের পরে সবাই এক সাথে চলে আসে। পার্কের ভিতরে সুন্দর একটা মসজিদ আছে – চমৎকার কাঠামো। যায় হোক আমাদের কোলাহল মুখর পরিবেশে দুপুরে খাবার খাওয়া হয়ে যায়। খাবার মোটামুটি। গ্রামীণ পরিবেশ যদিও আর একটু বেটার ডিমান্ড করে। তারপরও এত লোকের ব্যবস্থা করছে ওভারঅল খারাপ না। ভাত ঘুমের যাদের অভ্যাস আছে তাদের জন্য খাবার খাওয়ার পরের সময় টা খুবই বিরক্তিকর। যদি টানটান একটা বিছানা আর একটা নরম তুলতুলে বালিশ না পাওয়া যায় । ।
এই নরম তুলতুলে বালিশ নিয়ে আমার মজার একটা অভিজ্ঞতা আছে নেপাল ট্রিপে। মাশরিফ তখনও পৃথিবীর বুকে পা রাখেনি। মায়ের পেটে করে মাশরিফের নেপাল ভ্রমণ ছিল।আমার আর মাশরিফের মায়ের নেপাল ট্রিপ। মাশরিফ ওর মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় আমরা অনেক গুলো দুঃসাহসিক ট্রিপ দিয়েছিলাম। পরিবারের সবার নিষেধ থাকা শর্তেও আমরা ইন্ডিয়া, নেপাল ও মালায়শিয়া ভ্রমণ করেছিলাম। যাই হোক সেই সব গল্প অন্য আর একদিন করবো । ডে ট্রিপে এই খানে দুপুরে ভাত ঘুমের জন্য সবাই টানটান বিছানা আর তুলতুলে বালিশ মিস করবেন এই কারণে আসার সময় ২/৩ তা বেড শিট আর কুশন টাইপ বালিশ নিয়ে আসলে সবুজ কার্পেটের বিছানায় একটু আড়মোড়া দিয়ে নিতে পারবেন।
জিন্দা পার্কে সবচেয়ে সুন্দর লেগেছে ওদের লাইব্রেরী। কি চমৎকার রুচিশীল নির্মাণ। আলো বাতাসের মিশেলে চমৎকার একটি আবহাওয়া তৈরী হয় ভিতরে। একটা আয়েশী চেয়ার নিয়ে গোটা বিশেক বই, সাথে চা মুড়ি পাকোড়া থাকলে কয়েকদিনের অবসর ভালোই কাটবে। লাইব্রেরীর সামনের রাস্তা ধরে লেকের অন্য পাড়ে আসা যায়। লাল সুরকির রাস্তার দুই পাশে লম্বা গাছের সারি। নান্দনিক ব্যাপার। পাশেই একটি সাঁকো পারাপারের ব্যবস্থা রেখেছে। ছোট বেলায় গ্রামের বাড়ির স্মৃতি মনে করায় দেয়।
শেষ বিকেলে সবুজ মাঠে মেঠো পথে ধরে মাশরিফ আর ওর বোনদের খুনসুটি দেখতে দেখতে সূর্যাস্তের সময় হয়ে আসে। শীতের গ্রামের গন্ধ টের পাওয়া যায়। গোধূলী লগ্নে লালটুকটুকে সূর্য শেষ হাসি দিয়ে বিদায় জানায়। জিন্দা পার্কে আমরা পাখির ডাক শুনতে শুনতে বাড়ির পথে রওনা দেই। মাশরিফের সকাল সন্ধ্যা ঘন সবুজে পাখির ডাকে কেটে যায়। আবারো যান্ত্রিক শহর ফিরে আসা, আবারো আরো একটি ট্রিপের অপেক্ষা থাকা