কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মাশরিফের প্রথম বিমান ভ্রমণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মাশরিফের প্রথম বিমান ভ্রমণ

by mosharraf
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পথভ্রষ্ট দিগন্ত

যদিও দেশে ও বিদেশে সমুদ্র দেখা হয়েছে অনেক বার কিন্তু এইবারের উপলক্ষটা খুবই অন্য রকম। মাশরিফের প্রথম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কাছে যাওয়া। আমাদের ৩দিনের প্ল্যান, বুধবার আর বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে সাথে শুক্রবার এই ৩ দিন, শনিবার আবারও জঞ্জালের শহর ঢাকাতে ফিরে আসা। মাশরিফ মাত্র ৭ মাস শেষ করে আট মাসে পা দিয়েছে, তাই আমাদের সব চিন্তা ওকে কেন্দ্র করেই। প্লেনের টিকেট আর হোটেল বুকিং বেশ আগেই করে ফেলা হয়েছে। আর একটা ব্যাপার ছিল। তখন মাশরিফের একমাত্র মামা কক্সবাজার থাকেন, এক ঢিলে ২ পাখি-মামুর বাড়ি সাথে সমুদ্রের হাতছানি।

কক্সবাজার যাবার ভ্রমণ পরিকল্পনা

এমনিতে মাশরিফের প্রথম জার্নি তাই খুব বেশি ঘুরাঘুরির প্ল্যান নাই। সকাল ১০টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা দিবো। প্রথম বিমানযাত্রা মাশরিফের, কি ভাবে রিএক্ট করে খুবই চিন্তিত আমরা। যদিও আমার চেয়ে আমাদের পরিবারের চিন্তার শেষ নাই। ভ্রমনের ব্যাপারে বরাবরই আমি একটু অতি উৎসাহী। ছোটোখাটো ব্যাপার আর চ্যালেঞ্জ নিয়েই ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। এই ব্যাপারে আমার সহধর্মিনী কম যায় না। পরিবাবের নিষেধ শর্তেও, মাশরিফকে পেটে নিয়ে ইন্ডিয়া, নেপাল ও মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছে। সেই গল্প অন্য দিন করবো ইনশাল্লাহ।

মাশরিফ বেশ আনন্দ নিয়ে প্রথম বিমানযাত্রা করলো, নো কান্নাকাটি, ১০ মিনিট পরে ঘুমায়ে গেলো 🙂।  হোটেলের সাথে আমাদের কমপ্লিমেন্টারি এয়ারপোর্ট পিক ড্রপ ছিল। বেশ আরামে হোটেলে চলে আসলাম। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলে মাশরিফকে নিয়ে সমুদ্র দেখতে চলে গেলাম। সমুদ্রের বিশালতা, সূর্যাস্ত আর বালি দিয়ে মাখামাখি করে প্রথম বারের মত সমুদ্রকে আলিঙ্গন করে নিল মাশরিফ। ওর আনন্দে আমরাও বেশ আনন্দিত। সন্ধ্যায় হোটেলে সময় কাটানো, সুইমিং পুলের পাশে বসে চাঁদের আলোয় সমুদ্রের গর্জন শোনা আর রুফ টপে ডিনার করে আমাদের প্রথম দিনের গল্প শেষ 🙂

আমার প্রথম সমুদ্র দেখা

আমি প্রথম সমুদ্র দেখেসিলাম আমার এস.এস.সি পরীক্ষার পর বন্ধুদের সাথে কক্সবাজার এসে। সেই গল্পও করবো একদিন ইনশাল্লাহ। এইবার প্রথম দেখছি ছেলেকে সাথে নিয়ে। মাশরিফের তো এখন ঘুমের বয়স ঘুমতো শেষ হয় না। আমাদের ও ভোরের সমুদ্র দেখা হয় না সমুদ্র পারে গিয়ে। যা দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে, যদিও সামনে এক রিসোর্ট আর ঝাউ বন, তার মাঝে যত টুকু দেখা যায় আরকি। ব্রেকফাস্টে আমাদের সাথে মাশরিফের বেবি চেয়ারে খাবার নিয়ে খেলা, যাকে দেখে তার দিকে মুচকি হাসি দেওয়া। বেলা হয়ে যাওয়াতে আজকে সমুদ্রের কাছে যাওয়া হলো না কিন্তু খুবই উপভোগ্য সময় গেলো সুইমিং পুলে। বাপ-বেটা মিলে পানিতে সেই দাপাদাপি করলাম, পানি পেয়ে মাশরিফের আনন্দের শেষ নাই। প্রায় ১ ঘন্টা আমরা সুইমিং পুলে দাপিয়ে বেড়ালাম। আমাদের পুলের ছবি ফেসবুকে দেখে পরিবারের সবার কি টেনশন,  ফোনের উপরে ফোন। সে যাই হোক আনন্দময় সময় পার করে আমরা গেলাম মাশরিফের মামার বাসায় বেড়াতে।

বৃষ্টিময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত 
বৃষ্টিময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত 

মামা বাড়ি ও সমুদ্র দর্শন

মামুর বাড়ি মধুর হাড়ি। আমি ভুরিভোজ করে ঘুম দিলাম। ওই দিকে মাশরিফ মামা কে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা সাথে মামাতো ভাই ওয়াফিক আছে আরকি লাগে। খেলতে খেলতে ক্লান্ত মাশরিফ শর্ট ঘুম দিয়ে আবার ও অশান্ত হয়ে উঠে। এই ভাবেই মামার বাড়ি বেড়ালো মাশরিফ। আজকে আমাদের নো সী বিচ ডে। সারা দিনে একবারও সমুদ্রের কাছে গেলাম না। উল্টো শহুরে গরম আর বিদ্যুৎহীন বিকেল সন্ধ্যা পার করলাম। যদিও মাশরিফের মামার বাড়ির পাশেই ফিশারি ঘাট।বিকেলে একদফা একটু ঢুও মেরে এসেছি। বিকেলের চেয়ে সকালে ঘাটটা খুব জমজমাট থাকে, খুব ফ্রেশ সী ফিশ পাওয়া যায়। এবং অবশ্যই লোকাল বাজারের দামে, টুরিস্ট বাজারের দামে নয়। সন্ধ্যার পরে প্ল্যান হলো আমরা রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডে এ বেড়াতে যাবো।

আন্ডার সী একুইরিয়াম

পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় বিনোদনের নতুন সংযোজন রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড। এ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে এ আছে সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। বিরল প্রজাতির মাছসহ এখানে আছে হাঙ্গর, পিরানহা, শাপলাপাতা, পানপাতা, কাছিম, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরী, সাগর কুঁচিয়া, বোল, জেলিফিস, চেওয়া, পাঙ্গাস, আউসসহ আরও অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী। যথেষ্ট ভালো উদ্যোগ যারা নিয়মিত দেশের বাইরে বেড়াতে যান। তারা প্রায়ই এই রকম আন্ডার সী একুইরিয়াম দেখে থাকবেন। অনেক লিমিটেশন থাকলেও আমরা বেশ মজা করেই ঘুরে দেখলাম। সমুদ্রের নিচের বৈচিত্রময় জগৎ সম্পর্কে  কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যাবে। সাথে বর্ণিল মাছের রাজ্য। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য খুবই চমৎকার। বলতে পারেন মাস্ট ভিসিট প্লেস। আমাদের উচিত এই রকম উদ্যোক্তাদেরও বেশি বেশি উৎসাহ দেয়া। আমাদের দ্বিতীয় দিনও শেষ, মাশরিফের প্রথম ভ্রমণ শেষের দিকে চলে আসছে।

কক্সবাজারে  রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড ভ্রমনে মাশরিফ 
কক্সবাজারে  রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড ভ্রমনে মাশরিফ 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মাশরিফ

আজকে আমাদের শেষ দিন। সারাদিনই সমুদ্র তীরেই থাকবো বলে প্ল্যান করে ফেললাম। আজকে আবহাওয়াটা খুবই সুন্দর। খন্ড খন্ড কালো মেঘে ভরে যাচ্ছে নীল আকাশে। মেঘের প্রতিবিম্ব পড়েছে সাগরে, ঘোলা পানির ঢেউ  আছড়ে পড়ছে তীরে, এই বৃষ্টি নামলো বলে। সমুদ্রের গর্জনে মেঘলা আকাশ মাঝে মাঝে একটু আকটু বৃষ্টি। এর মধ্যেই আমরা বাপ্-বেটা সমুদ্র সৈকতে বালিতে অনেকক্ষণ খেললাম। বালিতে গড়াগড়ি দিয়ে মাশরিফ ততক্ষনে বালিময় হয়ে গিয়েছে। মাঝে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অবশই মাশরিফকে বাঁচাতে আমরা ছাতার নিচে খুনশুটিতে ব্যস্ত ছিলাম। যাইহোক এইবার হোটেলে ফিরে  আবারো সুইমিং পুলের পানিতে ঝাপাঝাপি শুরু করেদিলাম। মাশরিফও আজকে পানির মজা পেয়ে গিয়েছে। এই দিকে মেঘ আর সূর্য মামা ওভারটেকের খেলায় ব্যস্ত আর আমরা পানিতে। পানিতে দাপাদাপির সময় মাশরিফ যেই হাসিটা দেয় সেটা প্রাইস লেস। এই হাসিটা দেখার জন্যই মনে হয় ইশ যদি কচ্ছপের মতো ৫০০/১০০০ বছর পৃথিবীটা দেখা যেত !!

আমি আর বাবা এখন সুইমিং করবো - মাশরিফ 
আমি আর বাবা এখন সুইমিং করবো – মাশরিফ 

মন খারাপের শুরু

এইবারের মতো শেষবিকেল, আমাদের এই কক্সবাজার ট্রিপের। মন খারাপের শুরু কিন্তু হোটেলে বসে থাকলে তো মন আরো বেশি খারাপ হবে। তাই মামাদের কে সাথে নিয়ে বিকেলের মৃদু মন্দ বাতাসে সমুদ্র তীরে সময় কাটানোর প্ল্যান করে ওই ভাবে বেরিয়ে পড়ি। আমার কাছে কক্সবাজারকে বর্ষা অথবা বর্ষা পরবর্তী সময়েই সব চেয়ে সুন্দর লাগে। কালো মেঘ আর সূর্যের আলোছায়ার খেলা। দুরন্ত গর্জনের সাথে মন ভোলানো নির্মল বাতাস ভেসে আসে সাগরের দিগন্ত জোড়া জলরাশি থেকে। প্রচুর মানুষ সৈকতে তারপরেও একটা অনাবিল শান্তি শান্তি পরিবেশ। কেউ চেয়ার পেতে সমুদ্রের গর্জন শুনছে , কেউবা শেষ বিকেলের ঢেউতে পা ভিজিয়ে নিচ্ছে , কেউবা স্পোর্টস এক্টিভিটিতে ব্যাস্ত, দু একজন আবার দেখি ঘুড়ি উড়াচ্ছে। চমৎকার আয়োজন।

ওয়াকিং উইথ .... 
ওয়াকিং উইথ …. 

সূর্যাস্ত হতেই মানুষের কোলাহল কিছুটা কমে আসলো, আমরাও শেষ বিদায় দিয়ে ফিশ মার্কেটে গেলাম অক্টপাস, কাঁকড়া খাওয়ার জন্য। থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার মতো ছোট ছোট দোকানের সামনে ফিশ সাজিয়ে বসে আছে। আপনি পছন্দ করে দিবেন, ওই গুলো আপনাকে ফ্রাই করে পরিবেশন করবে। মাঝে এঞ্জেল ড্রপ খুব পপুলার হয়েছিল। কেন জানি একটা সিজনই পেয়েছিলাম। চমৎকার আয়োজন ছিল। যাই হোক অক্টোপাস খেয়ে আমাদের এই বারের ট্রিপ মোটামুটি শেষ, আগামীকাল জঞ্জালের শহরে আবার ফিরে যাবো। ট্রাভেল করা অবস্থায় অবশ সেই জঞ্জালের শহরকে অনেক আপন মনে হয়, মিস করি অনেক কিন্তু ২/৩ দিনের মধ্যে আবারও নেক্সট ট্রিপে যাওয়ার জন্য মন আকুপাকু শুরু করে দেয়। আপাতত কক্সবাজার কে বিদায় দিয়ে পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় 🙂

Related Articles

Leave a Comment